Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মামলার আবেদন এবং বিভিন্ন নিয়মাবলী

 

 ১৯০৮-এর ৩৩নং আদেশে দরিদ্র জনগণকে কোর্ট ফি ছাড়া মামলা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৩নংআদেশের ১নং নিয়মে এবং জেনারেল

ক্লজেস অ্যাক্ট, ১৮৯৭-এর ৩(৩৯) ধারায় 'দরিদ্র' ব্যক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ক) যদি কোনো ব্যক্তির
আইনানুযায়ী কোর্ট ফি দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সহায়-সম্বল না থাকে খ) যে ক্ষেত্রে এরকম ফির কথা বলা নেই, প্রয়োজনীয় পরিধেয় কাপড় এবং
মামলার বিষয়বস্তু ছাড়া পাঁচ হাজার টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি না থাকে, তাকে 'দরিদ্র' হিসেবে ধরা হবে এবং এ ধরনের ব্যক্তিই কোর্ট ফি ছাড়া
মামলা করার সুযোগ পাবেন।
এ সুযোগ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দরিদ্র ব্যক্তিটিকে নির্ধারিত নিয়মে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। একটি আরজিতে যেসব বিষয় থাকতে
হয়, এ ধরনের সুযোগ পাওয়ার আবেদনেও সেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা এবং তার আনুমানিক
বাজারমূল্যের একটি তালিকাও জমা দিতে হবে।
আবেদনকারীকে নিজে হাজির হয়ে আদালত বরাবর তার আবেদন উত্থাপন করতে হবে। তবে আদালত যদি এ ক্ষেত্রে তাকে বিশেষ কোনো ছাড়
দেয়, সে ক্ষেত্রে সরাসরি উপস্থিত না হয়ে অন্য কারো মাধ্যমেও আবেদন উপস্থাপন করা যাবে। মনে রাখতে হবে, আবেদনকারী যদি অন্য কাউকে
 তার পক্ষ থেকে আবেদনপত্র উপস্থাপনের জন্য নিয়োগ করে, সেই ব্যক্তিকে এমন হতে হবে যাতে আবেদনকারী সম্পর্কে আদালত কোনো গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্ন করলে তিনি তার উত্তর দিতে পারেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদালত ইচ্ছা করলে জেরাও করতে পারেন।
কোনো এজেন্টের মাধ্যমে এ ধরনের আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত ইচ্ছা করলে আবেদনকারীকে সরাসরি জেরা করার জন্য বিশেষ কমিশন
 নিয়োগ করতে পারেন। কমিশন আবেদনকারীর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারে। একজন অনুপস্থিত সাক্ষীকে জেরা
করার জন্য যেভাবে কমিশন নিয়োগ হতে পারে, একইভাবে এ ধরনের আবেদনকারীকে যাচাই করার জন্যও আদালত কমিশন নিয়োগ করতে পারেন।
কয়েকটি পরিস্থিতিতে দরিদ্র হিসেবে মামলা করার এ ধরনের আবেদন আদালত নামঞ্জুর করবেন। যেমন: (১) যদি আবেদনটি নির্ধারিত নিয়মে
করা না হয়, (২) যদি আবেদনকারী প্রকৃত অর্থে একজন 'দরিদ্র' না হয়ে থাকেন, (৩) যদি আবেদনকারী সুযোগ গ্রহণের উদ্দেশে আবেদন দাখিল
করার আগের দুই মাসের মধ্যে প্রতারণমূলকভাবে তার সম্পত্তি স্থানান্তর করে থাকেন, (৪) যদি তার দায়েরকৃত মামলায় মামলা দায়ের করার
জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণ কারণ না থাকে। (৫) যদি তিনি কারো সঙ্গে এমন চুক্তি করেন, যাতে বিচারাধীন বিষয়ে অন্য কারো অধিকার
 তৈরি হয়।
আদালত যদি মনে করেন, আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই, তাহলে তিনি একটি তারিখ ধার্য করবেন, যেদিন আবেদনকারী
 তার দরিদ্র হওয়ার স্বপক্ষে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করবে। একই দিন বিপরীত পক্ষ আদালতে এ মর্মে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে, আবেদনকারী
 প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ব্যক্তি নয়।
উক্ত দিনে আদালত উভয়পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষীর শুনানি করবেন এবং প্রয়োজনে আবেদনকারী বা তার নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করবেন। শুনানি শেনে আদালত তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করবেন। আদালত উভয়পক্ষতে নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগও প্রদান করবেন। এসব প্রক্রিয়া শেষ করার পর আদালত সেই কথিত দরিদ্র ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করবেন।
তবে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়বে না, যদি আবেদনকারী স্থানীয় কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে তার দারিদ্র্যের ব্যাপারে কোনো
 প্রত্যয়নপত্র আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন। সেই প্রত্যয়নপত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উল্লেখ করবেন, আইন অনুসারে আবেদনকারী একজন 'দরিদ্র'
ব্যক্তি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নপত্র যদি আদালতের কাছে সন্তোষজনক মনে না হয়, সে ক্ষেত্রে আদালত পূর্বোক্ত প্রক্রিয়া
অনুসরণের ব্যাপারে অগ্রসর হতে পারেন।
আদালত কর্তৃক আবেদন গৃহীত হলে সেটি নথিভুক্ত করা হবে এবং মামলার মূল কার্যক্রমে আদালত প্রবেশ করবেন। অন্যান্য দেওয়ানি মামলার সঙ্গে
এ ধরনের আবেদনকারীর মামলার পার্থক্য এই যে, এখানে বাদীকে মামলার পিটিশন, সরকারি আইনজীবীর নিয়োগ কিংবা মামলাসংক্রান্ত অন্যান্য
প্রক্রিয়ায় কোনো রকমের কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে না। তবে সমন জারির ফি তাকে প্রদান করতে হবে।
বিবাদী কিংবা সরকারি আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ইচ্ছা করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের দরিদ্র ব্যক্তির বিনা কোর্ট ফিতে মামলা
পরিচালনার সুযোগ রহিত করতে পারেন। যেমন: (ক) মামলা চলাকালে বাদী যদি কোনো রকম অসদাচরণ করে থাকে, (খ) যদি আদালত মনে
 করে, আবেদনকারীকে 'দরিদ্র' হিসেবে মামলা পরিচালনার সুযোগ আর অব্যাহত রাখার প্রয়োজন নেই, (গ) যদি সুযোগ পাওয়ার পর দরিদ্র
ব্যক্তিটি অন্য কারো সঙ্গে এমন চুক্তি করে, যাতে বিচারাধীন বিষয়টিতে অন্য ব্যক্তির স্বত্ব বা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাদী যদি তার মামলায় জয়ী হন, সে ক্ষেত্রে আদালত তার মামলার যাবতীয় কোর্ট ফি হিসেব করবেন, যা স্বাভাবিকভাবে তাকে পরিশোধ
করতে হতো। এ পরিমাণ অর্থ আদালত যে কোনো পক্ষের কাছ থেকে ডিক্রি দিয়ে আদায় করতে পারেন। মামলাধীন সম্পত্তি বা বিষয়টিতে এ
 অর্থ প্রথম দায় হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি বাদী কর্তৃক সমন জারি বাবদ অর্থ পরিশোধ না করার কারণে কিংবা শুনানিতে বাদীর
অনুপস্থিতির কারণে বাদী তার মামলায় হেরে যান কিংবা 'দরিদ্র' হিসেবে মামলা পরিচালনার অধিকার হারান অথবা মামলা উঠিয়ে নেন কিংবা
তার মামলাটি রহিত হয়ে যায়, এসব ক্ষেত্রে আদালত বাদী বা সহ-বাদীদের কোর্ট ফি পরিশোধের আদেশ দেবেন।
যদি মামলার বাদীর মৃত্যু ঘটে কিংবা মামলায় সহবাদী হিসেবে অন্য কেউ যুক্ত হন, সে ক্ষেত্রে আদালত বাদীর সম্পত্তি থেকে কোর্ট ফি আদায়
 করে নেয়ার জন্য সরকারকে আদেশ প্রদান করবেন।
দরিদ্র হিসেবে মামলা পরিচালনার কোনো আবেদন যদি আদালত প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি পরবর্তীতে একই অধিকার আদায়ের জন্য
দরিদ্র হিসেবে মামলা করার কোনো আবেদন করতে পারবেন না। তবে একই অধিকার আদায়ে তিনি সাধারণভাবে মামলা করার অধিকার
রাখবেন। দরিদ্র হিসেবে মামলা পরিচালনার সুযোগ চেয়ে যে আবেদন করা হবে, সেটি দায়ের করার খরচ এবং আবেদনকারীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করার তদন্ত খরচও মামলার খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
দেওয়ানি কার্যবিধির ৪৪নং আদেশে কোনো মামলায় আপিল করার ক্ষেত্রেও দরিদ্র ব্যক্তিকে কোর্ট ফি প্রদান থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। আপিল
আবেদনের সঙ্গেই আপিলকারীকে উল্লেখ করতে হবে, দারিদ্র্যের কারণে তিনি কোর্ট ফি দিতে সমর্থ নন। আপিল আদালত যদি মনে করেন,
তার আপিলের যথার্থতা রয়েছে সে ক্ষেত্রে তদন্তপূর্বক তার কোর্ট ফি মওকুফ করতে পারেন। তবে যে আদালত থেকে প্রাপ্ত ডিক্রির বিরুদ্ধে
 আপিল এসেছে, সেই আদালত যদি পূর্বে তাকে 'দরিদ্র' হিসেবে সুযোগ প্রদান করে থাকে, সেক্ষেত্রে আপিল আদালত কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই
আবেদনকারীর কোর্ট ফি মওকুফ করতে পারেন। -